আজ শুক্রবার, ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ফের ঘুমের দেশে রাজউক

সংবাদচর্চা রিপোর্ট :
মাত্র এক দিনের অভিযানেই গুটিয়ে গেছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ রাজউক। লাগাতার অভিযানে নামার প্রতিশ্রুতি দিলেও এর বাস্তবায়ন দেখা যায়নি নগরীতে। ঈদের আগে ২৮ মার্চ শহরে দ্বিতীয় অভিযান পরিচালনার দিন-ক্ষন ঠিক করেও তারা মাঠে নামেননি। ঈদের পর স্বাভাবিক কর্মযজ্ঞ শুরু হলেও রাজউকের ওই অভিযান পূনরায় দেখা যাবে কিনা- এ নিয়ে নানা আলোচনা চলছে সচেতন মহলে।
জানা গেছে, নগরীর নিয়ম বহির্ভুত রেস্তোরা ও সংশ্লিষ্ট ভবনগুলোতে টানা অভিযানের ঘোষণা দিয়েছিল রাজউক। গত ১০ মার্চ শহরের ৭টি রেস্টুরেন্টে অভিযানও চালিয়েছিল তারা। ওই অভিযানে জড়িমানার সাড়ে তিন লাখ টাকা আদায় করেই যেন নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছেন তারা। গত ২৮ মার্চ শহরের অসঙ্গতিপূর্ন রেস্টুরেন্ট ও ভবনগুলোতে দ্বিতীয় দফায় অভিযান চালানোর কথা থাকলেও এদিন রাজউক কর্মকর্তাদের দেখা মিলেনি কোথাও। এ নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা চলছে নগরীর সচেতন মহলে।
এর আগে গত ২৯ ফেব্রুয়ারি ঢাকার বেইলি রোডের বহুতল ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর আলোচনায় এসেছে নারায়ণগঞ্জের রেস্টুরেন্ট ও সংশ্লিষ্ট ভবনগুলো। অগ্নিঝুঁকি বিদ্যমান থাকায় নগরীর রেস্টুরেন্ট ও সংশ্লিষ্ট ভবনগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়ে জোরালো আওয়াজ উঠে। এর প্রেক্ষিতে রেস্টুরেন্টগুলো পরিদর্শন শুরু করে সিটি করপোরেশন ও ফায়ার সার্ভিসের সমন্বয়ে গঠিত যৌথ টিম। প্রথমত দু’দিনের ব্যবধানে দুদিন পরিদর্শনে নামলেও পরবর্তীতে ওই টিমেরও আর কোনো কার্যক্রম চোখে পড়েনি। তবে তাদের পরিদর্শনে অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থার ভঙ্গুর দশা এবং অগ্নিঝুকির বিষয়টি দৃশ্যমান হলেও কোনো আইনগত ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি।
এরপর গত ১০ মার্চ নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়া শহীদ মিনার সংলগ্ন ভাষা সৈনিক সড়কের পাশে অবস্থিত এমডি স্কয়ার ও মনির টাওয়ারের ভবনে থাকা রেস্টুরেন্টগুলোতে অভিযান চালায় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। মাত্র ৩ ঘন্টার ওই অভিযানে ৭টি রেস্টুরেন্টকে সাড়ে তিন লাখ টাকা জরিমানা করেছিল রাজউক। সেদিনের অভিযানে রাজউকের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আমিনুল ইসলাম বলেছিলেন, ‘পর্যায়ক্রমে আইন বহির্ভূত প্রতিটি রেস্তোরা ও সংশ্লিষ্ট ভবনে অভিযান চালাবেন তারা। সেই লক্ষ্যে ২৮ মার্চ পরবর্তী অভিযানের তারিখও নির্ধারণ করেছিলেন তিনি। তবে, ২৮ মার্চ নারায়ণগঞ্জের কোথাও অভিযান চালাতে দেখা যায়নি রাজউককে। এ নিয়ে নগরবাসীর মাঝেও নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাজউকের একজন ইন্সপেক্টর দৈনিক সংবাদচর্চাকে বলেন, ‘২৮ তারিখে নারায়ণগঞ্জে আমাদের যেই মোবাইল কোর্ট ছিলো, সেই অভিযানের জন্য আমরা পুলিশী সহায়তা পাইনি। ঈদের পর আবারও অভিযান শুরু হবে বলে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের কাছ থেকে জেনেছি। ঠিক কবে নাগাদ এই অভিযান কার্যক্রম শুরু হবে- এই বিষয়ে আমার কাছে সঠিক তথ্য নেই।’
জানা গেছে, গত ১০ই মার্চ মাত্র ৩ ঘন্টার অভিযানে সাত রেস্তোরাকে সাড়ে তিন লাখ টাকা জরিমানা ও একটি রুফটপ রেস্টুরেন্ট সিলগালা করে থমকে গেছে রাজউক কর্মকর্তারা। অথচ নগরীতে এখনো ঝুঁকিপূর্ন ভাবে অফিস ও আবাসিক ভবনে চলছে রেস্টুরেন্টের জমজমাট ব্যবসা। এমনকি বৈধতা ছাড়া নকশা বর্হিভূত ভাবে দিব্যি চলছে লাভিস্তা, চাঁদের পাহাড় ও গ্রান্ড প্যাসিফিক নামক তিন রুফটপ রেস্টুরেন্ট সহ নামে-বেনামে অসংখ্য রেস্টুরেন্ট। এসবের বিরুদ্ধে আদৌ কার্যকরি কোনো ব্যবস্থা নেবে কী দায়িত্বশীলরা- সেই প্রশ্নই এখন জোরালো হচ্ছে।
তথ্য মতে, ধনকুবদের এই জেলায় গত বেশ কয়েক বছর ধরেই রেস্টুরেন্ট ব্যবসা বেশ জমজমাট। আবাসিক ও অফিসের নকশায় গড়ে উঠা ভবনগুলো পরিণত হয়েছে রেস্টুরেন্ট কমপ্লেক্সে। ব্যবসা সফল হওয়ায় ঢাকা থেকে একে একে কাচ্চি ভাই, সুলতান ডাইন, স্টার লাউঞ্জ, ডাইনিং লাউঞ্জ, গ্রীন ভ্যালী, ক্রুশ স্টেশন, ক্রাউন রেস্টুরেন্ট ও বাফেট, দাওয়াত ই মেজবান, সিরাজ চুইগোস্ত, কেএফসি ও ভুতের বাড়ি এবং খানাজ সহ অভিজাত নানা রেস্টুরেন্টের সমাহার ঘটেছে এখানে। এছাড়াও বিভিন্ন ভবনে ঠাই পেয়েছে ‘নামে-বেনামের’ অসংখ্য রেস্টুরেন্ট।
যেসকল অভিযোগে ঢাকার রেস্টুরেন্টগুলোতে আইন প্রয়োগ করা হচ্ছে, সেসকল সমস্যা নারায়ণগঞ্জের সিংহভাগ রেস্টুরেন্ট ও ভবনগুলোতে বিদ্যমান। এছাড়াও ভবনগুলো আদৌ বাণিজ্যিক কিনা- এর স্বপক্ষে কোনো নকশা কিংবা দালিলিক কাগজপত্র দেখাতে পারেনি ৯৫ শতাংশেরও বেশি ভবন মালিকরা। বিল্ডিং কোড না মেনে গড়ে উঠায় সেখানে অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থা একেবারেই নাজুক। বিকল্প সিঁড়ির (ফায়ার এক্সিট) ব্যবস্থা না থাকায় প্রতিটি ভবনই ঝুঁকিপূর্ন। এমন নিরাপত্তা ঝুঁকি মাথায় নিয়েও দিব্যি চলছে রেস্টুরেন্টগুলো।
নগরবাসী বলছেন, আরও একটি ট্র্যাজেডির অপেক্ষায় রয়েছে কী রাজউক? সিটি করপোরেশন ও ফায়ার সার্ভিসও কী সেই একই কারণে নীরব? সচেতন মহলের এমন আলোচনা দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তাদের কানে কড়া নাড়বে কী? সেই প্রশ্ন থেকেই যায়।